আল্লাহ, নবী-রাসুল, ফেরেশতা, মানুষ এবং সারা জাহান এবং অন্যান্য গুরুত্বপুর্ন বিষয়ে আলোচনা এবং গবেষনা।


আহলে কুরআন অনুসারীরা কি কাফের/মুরতাদ হয়ে গেছে?


অনেক সুন্নী মুসলমানই মনে করেন যে আহলে কুরআন (কুরানিস্ট/কুরআন ওনলি/ কুরানবাদী) অনুসারীরা কাফের এবং মুরতাদ হয়ে গেছে। কারন তারা রাসুল সঃ এর সহিহ হাদিসসমুহ বিশ্বাস করে না। অনেক উগ্রপন্থী সুন্নী আলেমরা তো ফতোয়াই দিয়ে দিয়েছেন যে, আহলে কুরআন অনুসারীদের এমনকি হত্যা করা উচিত। আমরা বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি গোপনে গোপনে কিছু আহলে কুরআন অনুসারীদের হত্যাও করা হয়েছে।

বিশেষ কোন ধর্মবিশ্বাসের কারনে কাউকে হত্যা করা বা নির্যাতন করা প্রকৃত ইসলাম ধর্ম সমর্থন করে না কারন মহান আল্লাহ পবিত্র কুরানে বলেছেন ধর্মের ব্যাপারে কোন জবরদোস্তি নেই। ধর্ম বিশ্বাসের ব্যাপার, প্রমানের বিষয় নয়, ফলে বিভিন্ন মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসের প্রসার ঘটেছে। মহান আল্লাহ চাইলে এই পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষকে হেদায়েত দিতে পারতেন।

কাজেই আহলে কুরআন অনুসারীদের হত্যা করা বা কোন ধরনের নির্যাতন করা আমরা শান্তির ধর্ম ইসলাম সম্মত নয় বলেই মনে করি। আহলে কুরআনরা “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” কালেমায় বিশ্বাসী এবং তারা “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” কালেমাকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিশ্বাস করে। এ ব্যাপারে বেশ কিছু নির্ভরযোগ্য হাদিসও আছে যেমনঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেন, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর সম্প্রদায়কে আমার আরশের ছায়া তলে স্থান দাও। কারণ, নিশ্চয়ই আমি তাদেরকে ভালবাসি।

 রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- কোন মুসলমান বান্দা যখন লা -ইলাহা ইল্লাল্লাহু (আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই) বলে, তখন তা আকাশসমূহ ছেদন করে যায়, এমনকি তা আল্লাহর সম্মুখে গিয়ে পৌছে। আল্লাহ্‌ তখন বলেন, স্থির হও, তখন এটা বলে, আমি কিরূপে স্থির হব- আমি যার দ্বারা উচ্চারিত হয়েছি এখনও তাকে মাফ করা হয়নি। আল্লাহ তখন বলেন, আমি তোমাকে সে লোকের জিহ্বা দ্বারা পরিচালিত করিনি যাকে তার আগ মুহুর্তে মাফ করে দেইনি।

অধিকাংশ মুসলমান জানে যে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” ঘোষণা হলো জান্নাতের চাবিকাঠি – অনেকেই মনে করে থাকেন যে, এই ঘোষণা কেবল মুখে উচ্চারণ করলেই তারা নিশ্চিত জান্নাত লাভ করবেন, যেটা উপরের দুটি হাদিসও সমর্থন করছে। কাজেই আমার তো মনে হয় আহলে কুরআন অনুসারীদেরকেও মুসলমান হিসাবেই গন্য করা উচিত।

আহলে কুরআন অনুসারীরা মনে করেন হাদিসকে শরিয়তের দলিল হিসাবে মানলে ঈমানই থাকবে না। কুরআনের বিভিন্ন আয়াত এর মাধ্যমে তারা এই বুঝেছে। এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে, কুরআনের অনেক আয়াতকেই বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। এটা একটা বাস্তবতা। ইসলামে শিয়া, সুন্নি, হানাফী, মালেকী, শাফেয়ী, আহলে হাদিস, পীরপন্থি, সুফিবাদী ইত্যাদি বিভিন্ন গ্রুপ এবং ফেরকা আছে।

আহলে কুরআন অনুসারীদের তেমনই একটি গ্রুপ হিসাবেই দেখা উচিত। কে কাফের আর কে মুসলান এবং নাজাতপ্রাপ্ত এটা একান্তই মহান আল্লাহর বিচার এবং এখতিয়ারের বিষয়। যেটা স্বয়ং মহান আল্লাহর বিচার এবং এখতিয়ারের বিষয়, যেখানে আমরা যদি নাক গলাই তাহলে এটা কি শিরক হয়ে যায় না?

সব মুসলমান ভাই-বোনদের প্রতি আমার বিনিত অনুরোধ থাকবে, আসুন ধর্মের ব্যাপার নিয়ে মারামারি, হানাহানি, রক্তপাত বন্ধ করি। আসুন শান্তি, ক্ষমা, বিনয়, নম্রতা, ভালবাসা, উদারতা, বদান্যতা, দান-খয়রাতের ধর্ম ইসলামের সুমহান শিক্ষাকে আমরা ছড়িয়ে দেওয়ার চেস্টা করি যেটা আমাদের প্রিয় রাসুল সঃ সারা জীবন করে গেছেন।  সবাইকে ধন্যবাদ।

 


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।